বাংলা উপন্যাস মহা মানব দ্বিতীয় পর্ব
বাংলা উপন্যাস মহা মানব
(মোঃ সোহেল আহাম্মেদ)
দ্বিতীয় পর্ব

তুমি ময়না কে নিয়ে রেডি হয়ে থাকো আমি যাব আর আসব বেশি দেরী করব না,আচ্ছা আমি ময়না কে নিয়ে রেডি হয়ে থাকব তুমি কিন্তু বেশি দেরি করবে না।রাসেল স্কুল থেকে আসতে অনেক দেরি হবে এই ফাঁকে আমরা ডাক্তার দেখিয়ে চলে আসব।ময়না মামনি তোমার খাওয়া শেষ হয়েছে। জি....মা আমার খাওয়া শেষ হয়েছে । মা আমার নতুন জামাটা পড়ে যাব জামাটা বের করে দিয়ে যাও,ময়না একটু অপেক্ষা করো আমি এসে তোমার জামাটা বের করে দিয়ে যাব ।আচ্ছা মা তুমি তাড়াতাড়ি এসো এসো কিন্তু । তার কিছুক্ষণ পর ময়নার বাপ চলে আসলো।
আমরাও রেডি হয়ে বসে আছি একসাথে তিনজন বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম ডাক্তার দেখানোর জন্য ডাক্তার এর চেম্বারে গেলাম অনেক রোগীর সিরিয়ার ধরে বসে আছেে। আমরাও সিরিয়াল কাটলাম সিরিয়াল নাম্বার হল 102 ময়নার বাপ ডাক্তার দেখাতে দেখাতে অনেক রাত হয় যাবে চলো আমরা বাড়ি ফিরে যাই অন্য একদিন ডাক্তার দেখাবো। না ময়নার মা একটু অপেক্ষা কর এখন কার সময় টাকা হলে সবকিছু মিলে তুমি কোন চিন্তা করোনা আমি সবকিছু ম্যানেজ করে নিব।
তোমার সিরিয়াল 102 থেকে আমিন ১০ ভিতরে নিয়ে আসবো। এই বলে আমি চলে গেলাম যে মেয়েটি সিরিয়াল লিখে তাকে আমি 50 টাকার একটা র নোট ধরিয়ে দিলাম সে আমাকে বলল আপনার সিরিয়া এখন ৯ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন সিরিয়াল ডাকলে চলে যাবেন আর আমি মনে মনে ভাবলাম দেখো দুনিয়াটা কেমন জানি উলট পালট হয়ে যাচ্ছে টাকার কাছে মানুষ গুলাম হয়ে যাচ্ছে কি আর বলবো মানুষের মায়া মমতা আদর স্নেহ ভালোবাসা।
আর দুনিয়াতে থাকলো না থাকবেও না কি করে থাকবো কেউ কাউকে মান্য করে না সম্মান করে না।দশ মিনিট পর ডাক্তারের চেম্বারে ভেতর থেকে ডাক দিল 9 নাম্বার সিরিয়াল কার সে ভিতরে আসুন। আমি ভিতরে গেলাম আমার সাথে ময়নার বাপ ও গেল ডাক্তার কে সালাম দিয়ে বসলাম ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করল বলুন আপনার কি সমস্যা। আমি সবকিছু বলার পর ডাক্তার আমাকে বলল আপনার কিছু টেস্ট দিব আপনি এই টেস্ট গুলো করিয়ে নিয়ে আসুন আমি তাহলে বুঝতে পারব আপনার কি প্রবলেম।
টেস্টের সব রেজাল্ট এসে গেল আমরা আবার ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম ডাক্তার সবকিছু দেখে বলল আপনার স্ত্রী কে বলুন বাহিরে যেতে আমি আপনার সাথে কথা বলবো। ডাক্তার আমাকে বলল আপনার স্ত্রীর লিভার ক্যান্সার হয়েছে তাকে বাঁচাতে হলে রিভার ট্রানস্ফার করতে হবে। তার জন্য অনেক টাকা টাকার প্রয়োজন ডাক্তার সাহেব কত টাকা লাগবে। প্রায় সব মিলিয়ে 10 লক্ষ টাকা লাগতে পারে ডাক্তারের কথা শুনে আমার ভিতরটা কেমন যেন মুচরিয়ে উঠলো আমি ঠিক বলে বুঝাতে পারবোনা।
চোখ লাল হয়ে পানি ঝরতে লাগল।
ডাক্তার সাহেব আর কি কোন উপায় আছে যাতে টাকা কম খরচ হবে কারণ আমার কাছে এত টাকা খরচ করার মত সমর্থ নাই। ডাক্তার বলল আর একটা উপায় অবশ্য আছে কেউ যদি আপনার স্ত্রী কে লিভার দান করে যায় তাহলে শুধু অপারেশন এর টাকা লাগবে। আচ্ছা ডাক্তার সাহেব কতদিনের ভিতরে অপারেশন করতে হবে এক মাস এর ভিতরে অবশ্যই অপারেশন করতে হবে না হলে আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবেন না মনে রাখবেন। আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আমি আসি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাহির হওয়ার সময় আমার হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলি যাতে করে আমার স্ত্রী সব কিছু বুঝতে না পারে।
চলো আমরা বাড়ি ফিরে যাই। ডাক্তার কি বলল আমাকে তুমি কিন্তু বললা না ডাক্তার বলেছে সবকিছু ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই। তবে তোমার গ্যাসটিক টা একটু বেশি হয়ে গেছে।তারপর বাসায় চলে গেলাম ময়নার মা ফ্রেশ হয়ে রাতের জন্য রান্না ,করতেছিলাম এরকম সময় আমার ছেলে রাসেল দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে।
সবকিছু ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই তাহলে তুমি রক্ত বুমি করলে কেন? ডাক্তার বলেছে ঔষধ খেলে আর রক্ত মি ভূমি হবে না।তারপর আমি আমার মার রুমে চলে গেলাম আমার খেলনা আনতে গিয়ে দেখি বাবা টাং খুলে কি যেন খুজতেছে । আমি গিয়ে মাকে বলে দিলাম মা বাবা রুমের ভিতরে কি যেন খুঁজতে আছে তুমি গিয়ে দেখো মা। সাথে সাথে রুমের ভিতের গিয়ে দেখল বাবা জমির দলিল খুঁজতে আছে। মা বাবাকে বলল তুমি যা খুঁজতেছ সেইটা এখানে নেই তুমি একটু দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি। এই বলে মা জমিন দলিলটা বাবা হাতে তুলে দিয়ে বলল জমির দলিল দিয়ে তুমি কি করবে । বাবা বলল কিছু না এমনি খুঁজতে ছিলাম আচ্ছা ময়নার বাপ তুমি সত্যি করে বলতো ডাক্তার আমাকে কি বলেছে ডাক্তার যা বলেছিল আমি তো তোমাকে বলে দিয়েছি এখন আবার নতুন করে কি বলবো মা-বাবাকে বলল তুমি মনে করেছ আমি কিছুই জানি না
আমি সবকিছু আড়াল থেকে শুনেছি আমার লিভার ক্যান্সার হয়েছে আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না। এই কথা বলার পরপরই বাবা মায়ের মুখ চেপে ধরে বলল জুড়ে বলোনা তোমার ছেলে শুনলে মন খারাপ করবে। বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না কাটি করতে লাগলো আর মায়ের চোখে চোখের পানি অঝোরে ঝরতে লাগলো বাবাও কান্নাকাটি করতে ছিল আর বলল আমি কি অপরাধ করেছিলাম আল্লাহর কাছে আল্লাহ আমাকে এত বড় বিপদ দিল। আমি আড়াল থেকে বাবা-মায়ের সব কথা শুনতে পেরেছি আমার এত বেশি কষ্ট লাগছিল যেন পৃথিবীটা আমার বুকের উপর ধসেে পরেছে তার থেকেও বেশি কষ্ট মনে হয়েছিল। আর ভাবছিলাম মাকে ছারা এক মুহুর্ত আমি থাকতে পারবোনা মা মরে গেলে আমি কি নিয়ে বাসবো বাঁচব কাকে মা বলে ডাকব কার সাথে এত দুষ্টুমি করব জ্বালাব এইসব ভাবতে গেলে আমার মনে হয় মার সাথে সাথে আমিও মরে গেলে ভালো হবে ।

কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন