বাংলা উপন্যাস মহা মানব পঞ্চম পর্ব
বাংলা উপন্যাস মহা মানব
(মোঃ সোহেল আহাম্মেদ)
পঞ্চম পর্ব
না ভুল বোন আপনার স্বামী আমার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। আপনার স্বামী কে আগামী কাল সিঙ্গাপুর নিয়ে যাব উন্নত চিকিৎসার জন্য ।ভাইসাব আমাদের কাছে তো এখন এত টাকা নেই, টাকার জন্য কোন চিন্তা করবেন না।আপনার স্বামীর সকল চিকিৎসা টাকা সরকার দিবে। একটা খাম হাতে দিয়ে বলল এটা রাখেন ,এখানে কিছু টাকা আছে আপনার স্বামী না ফিরে আসা পর্যন্ত এই টা খরচ করবেন ।এই টাকা আমি দেই নাই সরকার দিছে।এখানে কত টাকা আমি জানিনা, আচ্ছা ভাবিজান আমি আসি আমি তাহলে আগামীকাল ভাইজান কে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। আচ্ছা ,বলে আংকেল চলে গেল। আমি মাকে বললাম আমাকে আগামীকাল বাবার কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু আমি বাবাকে দেখব।এই দিকে বাবাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে আগামী কাল রাত দশটা বাজে ফ্লাইট আমার বোন মা আমি আমরা সবাই এক সাথে বাবাকে দেখতে গেলাম সবার সাথে কথা শেষ করে, বাবা আমার সাথে একা কথা বলতে চাই। সবাই চলে গেল বাবা আমাকে বলল বাবা রাসেল আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই তুমি কোন দিন কাউকে বলতে পারবে না। আচ্ছা আব্বু আমি কাউকে বলব, না বাবা কান্না সুরে বলছে বাবা আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাঁচব না আমাকে কথা দাও বাবা কোন দিন তোমার মা
আর তোমার ছোট বোনকে কখনো কষ্ট দেবে না, বাবা আমি আমার মা ছোট বোন কে সব সময় দেখে রাখব। বাবা তোমার কিছু হলে আমি বাঁচব না তোমাকে পড়াশোনা করে অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে। আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বললাম বাবা আমি তোমাকে কথা দিলাম আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করে অনেক বড় ডাক্তার হব। আমি জানি বাবা তোমার কি হয়েছে, বাবা আমার মুখটা চেপে ধরে বলল আর কিছু করতে হবে না। তোমার মা শুনবে পরে অনেক সমস্যা হবে, বাবা আমাকে আর ও কিছু বলতে চেয়ে ছিল এমন সময় মা ডাক দিল। তোমাদের কথা কি শেষ হয়েছে। হা মা, আমাদের কথা শেষ হয়ে গেছে, অ্যাম্বুলেন্স এসে গিয়েছে এখনই তোমার বাবাকে
বাবাকে এম্বুলেন্স করে নিয়ে গেছে ,বাবা সিঙ্গাপুরে চলে গেছে। বাবা চলে যাওয়ার ২০(কুড়ি) দিন পর চিঠি আসল বাবা আগামী মাসের ৫ তারিখ রাত আটটার (৮) সময় আসবেন। আজ মাসের ১(এক) তারিখ কত দিন হল বাবা কে দেখিনা। সময় যেন আর কাটে না কবে হবে সকাল ,আসলে অপেক্ষার সময় সহজে যায় না আমারও সময় কাটছিল না বাবাকে এক পলক দেখার জন্য মনটা যেন কেমন করছে ঠিক বুঝাতে পারছি না অবশেষে অপেক্ষার সময় শেষ হলো আগামীকাল সকালেই ৫ তারিখ সকাল হলেই বাবাকে দেখব মনে অনেক আনন্দ হচ্ছে সকাল হলো। সকাল গড়িয়ে বিকেল হল।বিকেল গড়িয়ে রাত হলো সবাই এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলাম কিছুক্ষণ পর বাবা কে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল,আমি যেন কিছুতেই কান্না ধরে রাখতে পারছিনা। বাবা হুইল চেয়ারে বসে আসছে আর আংকেল হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে বাবাকে নিয়ে এসেছে আমি গেট থেকে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে বাবার কাছে চলে গেলাম। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম কি হয়েছে তোমার ?
তুমি হুইল চেয়ারে কেন তুমি কি হাঁটতে পারো না, তোমার কি হয়েছে বাবা আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম ঠিক বুঝতে পারলাম না মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না স্তব্ধ হয়ে গেলাম ।মা দূর থেকে আমাকে দেখে মা ও কান্নাকাটি করতেছে কিন্তু বাবা চুপ হয়ে বসে আছে আবারো আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা তোমার কি হয়েছে। বাবা আমাকে বলল
আমার কিছু হয়নি ডাক্তার বলেছে আমি কয়েকদিন পর এরপর আগের মত করে হাঁটতে পার। আমরা বাবাকে নিয়ে চলে গেলাম, বাবা কে কাছে পেয়ে অনেক আনন্দ হচ্ছে রাত পেরিয়ে সকাল হলো , সকাল পেরিয়ে বিকেল বিকেল ,পেরিয়ে রাত আবারও সকাল এই ভাবে দিন কাটতে লাগল মাস পেরিয়ে বছর। বছর পেরিয়ে পাঁচ বছর হয়ে গেল বাবা হুইল চেয়ার থেকে উঠতে পারিনি ।বাবা হুইল চেয়ার নিয়ে আমার ঘরে এসে ঘুম ভাঙাল আর
আজ না তোমার এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার কথা এখনো ঘুমাচ্ছিস বাবার কথা শুনে আমি ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বললাম রেজাল্ট বিকেলে এখন ঘুম থেকে উঠে কি করব আমি ।এই বলে আমি আবারও ঘুমিয়ে পরলাম দুপুরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে স্কুলে চলে গেলাম রেজাল্ট জন্য, স্যার আমাকে দেখে বলল এই দিকে এসো তুমি আমাদের স্কুলের নাম রেখেছ তুমি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে স্যারের কথা শুনে আমার চোখের পানি এসে গেল পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না আমার মনে অনেক ভয় ছিল আমার রেজাল্ট কেমন জানি হয় আমার রেজাল্ট বাবাকে সন্তুষ্ট করতে পারব তো ? না হলে আমার বাবা অনেক কষ্ট পাবে আমাকে অনেক কষ্ট করে স্কুলের খরচ সংসারের খরচ চালিয়েছে আমি রেজাল্ট শীট নিয়ে এক দৌড়ে বাড়ি চলে গেলাম বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম আমি পাশ করেছি। মা কই বাবা
বাবা অনেক খুশি হয়েছে ।আমি মার কথা জিজ্ঞেস করতেই বাবা কিছু বলে নাই চুপ হয়ে গেছে। ভালো লাগছেনা মার জন্য অনেক খারাপ লাগছিল তাই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে চিন্তা করলাম কোথায় যায় কোথায় যায় হঠাৎ করে মনে হল আমার বন্ধু রাশেদ আমাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনেক বার বলেছিল। কিন্তু আমি যাইনি আজ আমার মনটা ভালো নেই কারণ আমার রেজাল্ট এর কথা মাকে বলতে পারি নাই। তাই আমি আমার পাশের গ্রামের ১ বন্ধু আছে আমরা একসাথেই এস,এসসি পরীক্ষা দিয়ে ছিলাম তার রেজাল্ট কি জানার জন্য আমি তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম, বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আমি ডাক দিলাম বন্ধুর মা আসল আমাকে জিজ্ঞেস করল কাকে চাই বাবা। আমার বন্ধু রাশেদ চাই আমরা একসাথে পড়ি তোমার নাম কি আমার নাম রাসেল, তোমার নাম তাহলে রাসেল হা, তুমি বস রাশেদ আমি কে ডেকে দিচ্ছি আচ্ছা, রহিম দের বাড়িতে এই প্রথম আসলাম বাড়ি দেখে অনেক টা ঘাবড়ে গেলাম কারণ তারা অনেক বড়লোক বাড়িটা অনেক সুন্দর তাই ঘুরে ঘুরে দেখ ছিলাম হঠাৎ রহিম এসে হাজির হলো দুইজন অনেক অনেক কথা বলছিলাম রেজাল্ট এর কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল রেজাল্ট ভালো হয়েছে আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। রহিম বল কি খাবি বল না, আমি কিছু খাব না এক গ্লাস পানি হলে চলবে।
আমি রাশেদ কে বললাম আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি তার পর পানি খাব বলে, আমি বাথরুমে গেলাম গিয়ে দেখি একজন ভদ্রমহিলা এক বালতি কাপড় ধুচ্ছে আমি ভদ্রমহিলা ডেকে বললাম মা আমাকে একটা সাবান দিবেন।আমি হাত মুখ ধুব ভদ্রমহিলা সাবান দিল, আমি ভদ্রমহিলা কে দেখে আমার নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছিল,এই দৃশ্য না দেখলে মনে হয় নিজেকে কখনো চিনতে ও বুঝতে পারতাম না।সে আর কেউ নয় আমার মা, আমি বললাম মা তুমি এখানে কেন? তুমি এই বাড়িতে কাপড় ধুইতে কেন? মা আমার কথার কোন জবাব দিল না বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আমি এখান থেকে চলে গেলাম। মনের কষ্ট ভোলার জন্য নদীর কাছে আমার সব কথা বলে নিজেকে হালকা করার জন্য। কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না আমার যেন আরও কষ্ট বেড়ে গেল আমি মনে মনে চিন্তা করলাম আমাকে অবশ্যই একটা কিছু করতে হবে যাতে আমার মা অন্য বাড়িতে আর কাজ করতে যেতে না হয়।
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না ,আমার বন্ধু রাশেদ এর কথা অনেক মনে পড়েছে কিন্তু কি করব তাকে কি করে আমার মনের সব কথা বলব। আমার মা তাদের বাড়িতে কাজ করে সে কী মনে করবে ঠিক এরকম সময় আমার কাঁধে হাত হাত দিয়ে বলল আমার বন্ধু রাশেদ কি ব্যাপার রাসেল তুই আমাকে না বলে চলে গেলে কেন? এমনিতে চলে আসলাম তুই এমনি তে আসিস নাই কেন এলে আমাকে বল রাশেদ আমি বললাম না এমনিতেই।


কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন