Header Ads

বাংলা উপন্যাস মহা মানব তৃতীয় পর্ব

  বাংলা উপন্যাস মহা মানব

       (মোঃ সোহেল আহাম্মেদ)


মহা মানব তৃতীয়  পর্ব
তৃতীয়  পর্ব

তাই আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। আমি চলে গেলাম আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটা সুন্দর নদী আছে সে খানে। এই  নদী বর্ষা কালে এত সুন্দর যা দেখে যে কেউ এই নদীর প্রেমে পড়ে যাবে। চার দিকে থৈথৈ করছে পানি।ঝিরিঝিরি বাতাস গা জুড়িয়ে যায় । পাখির কিচির মিচির তার পাশ দিয়ে ববয়ে  গেছে সাদা ঘাস ফুল। যা দেখে মানুষ প্রেমে তো পড়বেই। আমার যখন  অনেক বেশি খারাপ লাগে, মা আমাকে বকা দেয়। বাবা মারে তখন মন ভালো করার জন্য আমি নদীর পাশে  ছোট্ট একটি আম গাছ আছে। নদীর ঠিক কিনারায় আম গাছের নিচে শীতল ছায়া বসে এই নদীর সুন্দর্য উপভোগ  করি।

এখন বর্ষার সময় নদীতে অনেক পানি। চারদিকে পানি থই থই করে আমার দেখতে অনেক ভাল লাগে। যখন দেখি প্রচন্ড শীতল বাতাস এসে আমার গায়ে লেগে মাথার চুল গুলোকে এলোমেলো করে দেয়।আমার শরীরটা জুরিয়ে, দিয়ে নদীর পানির সাথে ধাক্কা দিয়ে  স্রোতের সৃষ্টি করে। পানির কল কল আওয়াজ হয়। আমার শুনতে যে অনেক ভালো লাগে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু যখন মনে হয় মায়ের অসুখের কথা তখন দুনিয়া সকল সুখ মনে হয় নরকের যন্ত্রণার মত।  এখন আর ভালো লাগছে না। আমি চলে গেলাম বাড়িতে ছোট বোনের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে গেলাম আমার রুমে।কিছু খন পর মা আসলো আমাকে বলল খাওয়ার জন্য। খাওয়ার টেবিলে খেতে বসলাম আমি আমার ছোট বোন বাবা-মা। মা টেবিলের এক কিনারে বসে আমাদেরকে ভাত তরকারি বেড়ে দিচ্ছে।

আমি আর আমার ছোট বোন খেতে বসলাম, মায়ের হাতের রান্না কি যে মজা মনে হয় অমৃত খাচ্ছি ।আমার খাওয়া শেষ পর্যায়ে আমি বাবার দিকে তাকালাম বাবা মুখটা কেমন যেন শুকনো । হাত দিয়ে ভাত নাড়াচ্ছে কিন্তু খাচ্ছে না। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা তোমার কি মায়ের হাতের রান্না খেতে ভালো লাগেনা। না রান্না ভালো হয় নাই, বাবা বলল না বাবা তোমার মায়ের হাতের রান্না ঠিক আমার মায়ের মত মজা হয়। দেখো এখন আমি তোমার আগে খেয়ে উঠব। আমার সাথে তোমরা ভাই বোন পারবে না, আগে  খেতে, বাবা আমাদের আগেই খেয়ে ফেললেন। কিন্তু বাবার চোখ দুটো অনেক লাল, চোখের পানি টলমল করছে বাবাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবা তোমার চোখে পানি কেন? কি হয়েছে তোমার, কিছু না বাবা তরকারিতে একটু বেশি জাল তাই। আমি বাবাকে পানি ক্লাসটা বাড়িয়ে দিলাম বাবা পানি গ্লাসটা হাতে নিয়ে পুরোটাই এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেলল।

 আমার খাওয়া শেষ বাবা বলে চলে গেল। এইদিকে মায়ের চোখে যেন পানি টলমল করছে আমরা সবাই খেয়ে চলে গেলাম মা সবকিছু গুছিয়ে তারপর মা একা একা খেতে বসল। আমি এসে মায়ের এক পাশে বসলাম ,মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, আমি চলে গেলাম মায়ের কাছে কাছ থেকে ।মা খাওয়া শেষ করে মা চলে গেল। আমি ও চলে গেলাম বাবার খোঁজে বাবার সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাবাকে পেলাম না, আমি বাবা কে দূর থেকে দেখে অবাক হলাম বাবা পুকুর ঘাটে বসে পানিতে দিল মারছে।আর মনে মনে কি জানি বলছে তাই আমি বাবার কাছে যাওয়ার মত সাহস পেলাম না। বাবা জুরে জুরে মাকে ডাকছিল আমি মাকে ডেকে বললাম মা তোমাকে বাবা ডাকছে। মা আমাকে বললো কোথায় তোমার বাবা আমি বললাম মা বাবা পুকুরঘাটে ।এই বলে চলে গেলাম মা বাবার কাছে গিয়ে বলল তুমি আমাকে ডেকেছ, হা কেন? তোমাকে ডেকেছি কিছু কথা বলার জন্য আমরা ডাক্তার দেখিয়েছি দেখতে দেখতে প্রায় 20 দিন হয়ে গেল কিন্তু কিছুই তো করতে পারলাম না। এ বলে বাবা মা কে বলল তুমি বাড়িতে থাক আমি ডাক্তারের কাছে যাব ।

বাবা চলে গেল ডাক্তারের কাছে, ডাক্তারকে দেখে বাবা সালাম দিল ডাক্তার বাবাকে বললো বসুন। আপনার স্ত্রীর অপারেশনের কি করলেন বাবা বললেন ডাক্তার সাহেব আমার কাছে এত টাকা জোগাড় করা মত ক্ষমতা নেই। ডাক্তার সাহেব আমার লিভার টান্সফার করা যাবে। ডাক্তার বাবাকে বলল হা যদি আপনার লিভার ভালো থাকে তাহলে হবে ।এই কথা শুনে বাবার মুখে কিছুটা হাসি ফুটে উঠল। বাবা আবার জিজ্ঞেস করল অপারেশনের জন্য কত টাকা লাগবে, ডাক্তার সাহেব বললেন প্রায় তিন লক্ষ টাকা হলেই চলবে।

বাবা চিন্তা করছিল এত টাকা কিভাবে যোগার করব। ঠিক এই সময় একটা ইমারজেন্সি রোগি আসলো। ডাক্তার বলল আপনি একটু বসুন আমি যাব আর আসব। এক ঘন্টা পরে ডাক্তার আসলেন সাথে আরও একটা লোক আসলেন। আমার পাশে তাকে বসতে বললেন তিনি বসলেন।ডাক্তার সাহেব তাকে বললেন  যত তাড়াতাড়ি পারেন একটা কিডনি জোগাড় করেন।তা না হলে আপনার মেয়েকে বাঁচাতে পারবেন না।  বাবা ভদ্রলোকটি কে বলল আমি একটা কিডনি দিব। মেয়েটির বাপ  জড়িয়ে ধরে বলল আপনি আমার মেয়েকে বাঁচান । যত টাকা লাগে আমি আপনাকে দিতে রাজি আছি। বাবা ভদ্রলোক কে বললেন ।চলুন আপনার মেয়েকে দেখে আসি, আমি  আর ভদ্রলোক দুজনে মেয়েটিকে দেখতে গেলাম।  আমি মেয়েটি কে  অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম এত সুন্দর  ফুটফুটে একটা মেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। কিন্তু চোখ দিয়ে অজস্র পানি ঝরছে আর মেয়ের বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে বাবা আমি মরতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই বাবা তুমি আমাকে বাঁচাও এই বলে মেয়েটি কান্না করছে। 

বাবা মেয়ের এই নিদারুণ ভালোবাসা আর কষ্ট পুরো হাসপাতাল টা যেন ভারী করে দিয়েছে। বাতাস যেন কেমন ভারী হয়ে গেছে। হাসপাতালের লোকজন তাদের এই ভালোবাসা আর বাঁচার আকুতি দেখে।সবাই কেমন জানি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে ।এই দৃশ্য দেখে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি করব আমি মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম। তুমি মরবে না তোমাকে আমরা বাঁচাব। মেয়েটি আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছিল। আমি মরতে চাই না আঙ্কেল আমাকে বাঁচাও আমি মেয়েটিকে কি সান্তনা দিব। ঠিক এই মুহূর্তে বুঝতে পারছিলাম না, আমি বললাম আচ্ছা মা তুমি মরবে না তুমি বাঁচবে, আমরা তোমাকে বাঁচাব। মেয়েটি আমার কথা শুনে হেসে ফেলল সত্যি বলছেন আঙ্কেল আমি মরব না আমি বাঁচব হা মা।
তারপর আমরা দুজন আবার ডাক্তারের কাছে চলে আসলাম। ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ভাই আপনার বাড়ি কোথায়? সত্যি করে বলুন আপনি আমার মেয়েকে আপনার একটা কিডনি দিবেন। আমি বললাম হা আমি দিব লোকটা আমাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন আপনার বাড়ি কোথায়। কোথায় থাকেন আমি লোকটাকে বললাম আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জের লোক জন কখনই ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা কথা বলেনা।আমি আপনাকে বলেছি আপনার মেয়েকে একটা কিডনি দিব। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আমার স্ত্রীর অপারেশনের ন জন্য কিছু কাকা টাকা লাগবে আপনাকে দিতে হবে। ভদ্রলোক বলল আপনার কত টাকা লাগবে যত টাকা লাগবে আমি দিব।  আমার সব সম্পত্তি আপনার নামে লিখে দিতে রাজি আছি ।শুধু আপনি আমার মেয়েকে একটা কিডনি দিন। আমি ভদ্র কে লোককে বললাম আর একটা শর্ত আছে যে দিন আপনার মেয়ের অপারেশন হবে সেদিন একেই হাসপাতালে আমার স্ত্রীর অপারেশন একসাথে হবে। কিন্তু আমি যে আপনাকে একটা কিডনি দিব কোনদিন কাউকে বলতে পারবেন না। ভদ্রলোক বলল আচ্ছা আমি কাউকে বলব না ।





কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.